জালালুর রহমান : মৌলভীবাজারের জুড়ীতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে জুড়ীর জনপ্রিয় কমলা শিল্প। একাধারে মারা যাচ্ছে পুরাতন কমলা গাছ। পাশাপাশি নতুন চারা বড় হওয়ার আগেই মারা যাচ্ছ। চতুর্মুখি আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছেন অত্রাঞ্চলের কৃষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাই হতাশায় ভূগছেন কমলা চাষিরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় সাড়ে ৯৬ হেক্টর জমিতে ৯৪টি কমলা বাগান গড়ে উঠেছে। তন্মধ্যে গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে শতকরা ৮০ ভাগ বাগান রয়েছে। অত্রাঞ্চলের অধিকাংশ কমলা খাশি ও নাগপুরি জাতের চাষাবাদ হচ্ছে। গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের লালছড়া গ্রামের কমলা চাষি মোর্শেদ মিয়া (৫৪) বলেন, তার বাগানে প্রায় ১২ শত কমলা গাছ ছিল। গত ৩ বছরে ৪শত গাছ মারা গেছে। বর্তমানে বাকী গাছের মধ্যে প্রায় ২শত গাছ মারা যাওয়ার পথে। তিনি জানান, প্রথমে এক ধরনের সাদা পোকা মাটির নিচে কমলার শিকড় থেকে পানি চুষে ফেলে পরে উইপোকারা শিকড় খেয়ে ফেলে। তাতে প্রথম বছর গাছের পাতা হালকা হলুদ হয়। দ্বিতীয় বছর পাতা পুরোপুরি হলুদ হয়ে যায় এবং পাতা ঝরা শুরু হয়ে যায়। আর তৃতীয় বছর গাছটি মারা যায়। মোর্শেদ মিয়া আরো জানান, পোকার আক্রমণের শুরুতে কমলার আকার স্বাভাবি থাকলেও দ্বিতীয় বছর আকার ছোট হয় এবং পরের বছর একেবারে ছোট হয়ে যায়। জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মাহমুদুল আলম খাঁন জানান, জুড়ী এলাকায় যে কমলা বাগান গুলো আছে এগুলো ৩০-৪০ বছরের পুরনো। এ বাগান গুলো বীজের চারা থেকে করা হয়েছে কলমের চারা থেকে নয়। গাছগুলো বেশিরভাগই রোগাক্রান্ত। কমলা বাগানে অন্যান্য ফসলের চাইতে বেশি সার কীটনাশক এবং যত্নের প্রয়োজন পড়ে। অর্থের অভাবে অনেক সময় কৃষকেরা সেই সার এবং যত্ন দিতে পারে না। এছাড়াও এই এলাকার বাগানগুলো সংরক্ষিত বনের আশেপাশে হওয়ার কারণে বন থেকে বিভিন্ন রকমের মথ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় যেটা সমতল এলাকার কমলা বাগানে নেই। এছাড়াও লাঠিটিলা এলাকায় সাফারি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার কারণে কৃষকেরা বাগানের প্রতি যত্ন কমিয়ে দেয়। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাদেরকে আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি এবং সীমিত আকারে নতুন কিছু প্রদর্শনী প্রদান করা হয়। এই প্রদর্শনগুলোতে কলমের চারা দেয়া হচ্ছে যেটা আকারে ছোট হয় সহজে যত্ন নেয়া যায়।