বাংলা জাগরণ ডেস্ক ::আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, জুড়ী উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পশ্চিম বাংলার  জীবনমুখী গায়ক নচিকেতা'র "আমি সরকারি কর্মচারী" গানের হুবহু অনুকরণ করে অফিস করছেন! বিগত ১৬ বছর ধরে জুড়ী উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের প্রায় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেরিতে কর্মস্থলে উপস্থিতি নিত্য দিনের স্বাভাবিক ঘটনা!

জুড়ী উপজেলা প্রশাসনে কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে নিত্য বিলম্বিত উপস্থিতিরকারনে জুড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত সেবা প্রত্যাশী নাগরিকদের বহু প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণে বিলম্ব ও জনদূর্ভোগের সৃষ্টি হলেও অনিয়মগুলো এখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে! জুড়ী উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মস্থলে নিত্যদিনের বিলম্বে উপস্থিতির বিরুদ্ধে জুড়ী প্রেসক্লাবের সাংবাদিকবৃন্দ বহু দিন দায়িত্বরত জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কে অবগত করলেও দেখা গিয়েছিল যে, তৎকালীন সময়ের ইউএনও'রা পর্যন্ত জুড়ী উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির প্রায় প্রতিটি মাসিক সভায় বিলম্বে উপস্থিত হয়েছিলেন!

এই বিষয়ে স্থানীয় প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা প্রতিবাদ জানিয়েও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অথবা আত্নীয় পরিচয়ধারী কিংবা আওয়ামিলীগ পরিবারের সন্তান পরিচয়ধারী কর্মকর্তাদের দাপটে ও তীব্র হুমকি সুলভ আচরনে প্রতিবাদী সাংবাদিকরা ছিলেন সবদিকেই বঞ্চিত। ইতিপূর্বে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভাগুলিতে ও অন্যান্য সভায় কর্মকর্তাদের নিয়মিত বিলম্বে কর্মস্থলে ও সভায় যোগদান করা অথবা অনুপস্থিত ছিলেন! প্রায় মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভার শেষাংশে সরকারি বাসা থেকে পৌঁছে সভার সভাপতি এসিল্যান্ড কে সরিয়ে পূনরায় ইউএনও কর্তৃক সভার সভাপতির দায়িত্ব পালন! এই রকম ঘটনা ছিল জুড়ী উপজেলা পরিষদে নিয়মিত বিষয়! ১ম ও ২য় শ্রেণির কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের কর্মস্থলে নিত্যদিনের বিলম্বিত উপস্থিতি ও ১ম শ্রেণির প্রায় কর্মকর্তাদের সভায় অনুপস্থিতি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মৌখিক অভিযোগ উপস্থাপন করায় জুড়ী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হুমায়ূন রহমান বাপ্পী কে প্রায় সময়ই প্রশাসন কোনঠাসা করে রেখে আসছে এবং উত্থাপিত বিষয়গুলো সভার রেজুলেশনে কখনো লিপিবদ্ধ হয়নি যা সত্যিই আশ্চর্যজনক বিষয়!

কয়েক জন সরকারি কর্মকর্তা - কর্মচারীদের অপেশাদার ও রূঢ় আচরণ সচেতন জড়ী উপজেলাবাসী অবগত হলেও দীর্ঘদিন ধরে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন! এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে জুড়ী উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা নিজেদের গুণকীর্তন করার জন্য কয়েকজন সাংবাদিককে লালন করেছিলেন! তাই পরিষদ ও প্রশাসন ছিলো বেপরোয়া!

জুড়ী উপজেলার সেবা প্রত্যাশীদের কাছ থেকে  মৌখিক অভিযোগ শুনে জুড়ী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হুমায়ূন রহমান বাপ্পী গত বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ০৯৩০ ঘটিকায় জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে পৌঁছে দেখেন, ১ জন মহিলা ইউএনও কার্য্যালয় ঝাড়ু দিচ্ছেন। অনতিদূরে ইউএনও এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফখর উদ্দিন উনার কার্য্যালয়ে অবস্থানরত কিন্তু অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবাই অনুপস্থিত!

এ প্রতিবেদক সকাল ০৯৩৭ ঘটিকায় ২য় বার জুড়ী ইউএনও বাবলু সূত্রধর কে মুঠোফোনে ফোন দিয়ে ইউএনও ও অন্যান্য কর্মকর্তা -কর্মচারীদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতি জানতে চাইলে বাবলু সূত্রধর জানান যে, আমি (ইউএনও) ডিসি অফিসে মিটিংয়ে তাই আমার অনুপস্থিতিতে হয়তো ওরা দেরি করছে! তাৎক্ষণিক এ প্রতিবেদক মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কর্তব্যরত একাধিক কর্মকর্তার মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করলে ইউএনও বাবলু সূত্রধরের ডিসি অফিসের মিটিং নিশ্চিত হওয়া যায়।

অপরদিকে ইউএনও'র সিএ প্রতাপ দাস কে অফিস তালাবদ্ধ করে কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়ে জিজ্ঞাসায় প্রতাপ দাস পরবর্তী সময়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফখর উদ্দিনের কক্ষে অবস্থানরত এ প্রতিবেদক কে বলেন "আমার ভাবির ডায়রিয়া হওয়ায় স্যালাইন দিতে ডাক্তার নিয়েছিলাম, তাই দেরি হয়েছে"! জুড়ী উপজেলা প্রকৌশলী সুদর্শন সরকার প্রশিক্ষণের জন্য জুড়ীতে অনুপস্থিত থাকলেও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব প্রাপ্ত বড়লেখা উপজেলা প্রকৌশলীও নিয়মিত অনুপস্থিত বলে জুড়ী এলজিডি অফিস সূত্রে জানা যায়! গত বুধবার সকালে জুড়ী এলজিডি অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সবাই সরকার নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন! মোশতাক নামক এলজিডির জনৈক স্টাফ স্বেচ্ছায় এ প্রতিবেদক কে বলেন, অফিস টাইম ১০টায়, আপনি বসেন একাউন্ট স্যার সঠিক সময়ে আসবেন! এ প্রতিবেদক জুড়ী উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কক্ষের সম্মুখে অবস্থান নিয়ে প্রায় সকল কক্ষ তালাবদ্ধ অথবা কর্মকর্তা - কর্মচারীদের অনুপস্থিতি দৃশ্যমান হয়েছে।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন এ প্রতিবেদক কে বলেন "আমার এখানে ইউএনও দের মিটিং ছিল, অন্য দফতরের  কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন কি না তা জেলার কর্মকর্তাদের কে খুঁজ নিতে বলবো। অফিস টাইম সকাল ৯টায়"।

বাংলা জাগরণ ডটকম / এইচ আর বি